আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না’গঞ্জ চারুকলা ব্যস্ত মঙ্গলশোভা যাত্রার প্রস্তুতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চৈত্র মাস শেষের দিকে। হাতছানি দিচ্ছে বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ। বৈশাখ মানেই যেন বাঙালিত্বের উদ্যাপন। শিকড়ের পানে নিজেকে সমর্পণ করা। পয়লা বৈশাখ দেশবাসী বরণ করবে নতুন বছর ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ মানেই ধর্ম, বর্ণ, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গাওয়া, সার্বজনীন উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলার সব মানুষের এক হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা। পহেলা বৈশাখ মানেই সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা উপকরণ, রঙ-বেরঙের মুখোশ, শাড়ি, ধুতি আর পাঞ্জাবির মতো বাঙালিয়ানা সাজে নিজেকে রাঙিয়ে ঘুরে বেড়ানো। তবে এই দিনের আয়োজনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এবার নিয়ে ২২ বছর হতে চললো এ শোভাযাত্রার।
নানা ধরনের বাঙালি সংস্কৃতির শিল্পকর্ম তৈরিতে এখনো চলছে চারুকলার শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত সময়।
আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বাঙালির দরজায় করা নাড়বে পহেলা বৈশাখ। আবেগ আর উল্লাসে ওইদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দে মেতে উঠবে বাঙালি জাতি। সবাই গলা ছেড়ে গান গাইব কবি গুরুর সেই বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো….’। পহেলা বৈশাখ ছাড়া বাঙালির এতো বড় উৎসব আর নেই। পান্তার সাথে ইলিশের স্বাদে বাঙালির পহেলা বৈশাখের আনন্দের আর সীমা নেই। আর মঙ্গল শোভাযাত্রা হল এই উৎসবের প্রাণ। তাই বরাবরের মতো এবারো নারায়নগঞ্জ চারুকলা ইনষ্টিটিউট হাতে নিয়েছে নানা ধরনের কার্যক্রম। বাঙালির পহেলা বৈশাখের বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের করে থাকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এখন তাদের একদম দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
রবিবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিনে নারায়নগঞ্জ চারুকলা ইনষ্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায় মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রম নিয়ে তারা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রাটিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একদিকে মাটির সরা, পুতুল অন্যদিকে পেপার মাস্ক নিয়ে ব্যস্ত আছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও রয়েছে লোকজ মোটিভ, পেপার মাস্ক, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, মাছ, পাখি, ঘোড়া।
কেউ ব্যস্ত পেপার মাস্ক তৈরিতে, কেউবা রং তুলিতে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত পেপারম্যাট দিয়ে তৈরি হওয়া মুখোশগুলো সাজানোর কাজে, কেউবা ব্যস্ত লোকজ মোটিফ তৈরিতে। ১লা বৈশাখের না আসা পর্যন্ত চলবে এ কাজ। আনন্দের সঙ্গে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিশির বলেন, বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে সকল অশুভ কাজ ও শক্তিকে দূরে ঠেলে নতুন বছরকে সুন্দরভাবে বরন করার জন্য আমাদের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতি বছরই আমরা চারুকলা থেকে বিভিন্ন মোটিভ নিয়ে শোভাযাত্রার কার্যক্রম করি এবং সবাই নতুন বছরকে নতুন করে বরন করে নেয়ার জন্য অনেক আনন্দের সাথে কাজ করি।
শিক্ষার্থী জয়া বলেন, প্রতি বছরের মত এই বছরও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য চারুকলা থেকে এই আয়োজন সফল করার জন্য আমরা অনেক আনন্দের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। তবে এবার দুটি ষাঁড় সংযোজন করা হচ্ছে। আর এই ষাঁড়ের মধ্যে মানুষ ঢোকে ষাঁড় গুলোকে মুভ করাবে।তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই প্রত্যেকটা মঙ্গল শোভাযাত্রায় এই ষাঁড়টি থাকত। কিন্তু মাঝখানে নতুন নতুন মোটিভ বা শিল্পকর্ম চলে আসায় কয়েক বছর যাবত এটা করা হয়নি। কিন্তু এই বছর আবার এই ষাড়ঁ এর কাজ চলছে।
চারুকলা ইন্সিটিউটের সামছুল আজাদ বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইন্সিটিউট। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে এই ইন্সিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করে আসছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ